স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.
আ ফ ম রুহুল হকের আসনকে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
বলা হয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার জরিপ প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়,
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর
দূরত্ব রয়েছে। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি মন্ত্রীর
কর্মকাণ্ড সেই অর্থে ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং
নির্বাচনী এলাকায় এমন গুঞ্জনও রয়েছে যে রুহুল হক আগামীতে নির্বাচনে অংশ
না-ও নিতে পারেন। ঢাকা টাইমস২৪ এর অনুসন্ধানে গোয়েন্দা জরিপের এসব তথ্য
জানা গেছে। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্যে বারবার যোগাযোগ করা হলেও
স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পাওয়া যায়নি।
জাতীয় সংসদের উপনেতা
সাজেদা চৌধুরীর আসনকেও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য প্রতিকূল
হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফরিদপুর-২(নগরকান্দা-সালথা) আসনে আওয়ামী লীগের
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মী বিরূপ হয়ে আছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা
হয়। যা ঢাকা টাইমস২৪ এর অনুসন্ধানে জানা গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের
উপদেষ্টা মেজর (অব.) আ ত ম হালিমসহ প্রভাবশালী আরও কয়েকজন স্থানীয়
আওয়ামী লীগ নেতা আগামী নির্বাচনে বড়সড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবেন। আর তারা
একযোগে সাজেদা চৌধুরীর বিরোধিতায় নামলে ফলাফল অনূকুলে আসবেনা বলে
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আগামী নির্বাচনে
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হকের জয়ী হওয়ার
সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট
একাধিক সূত্র ঢাকা টাইমস২৪.কমকে জানায়, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দলের
অধিকাংশ নেতা-কর্মী প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নেই। আগামী নির্বাচনে
চাপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ এই প্রতিমন্ত্রীকে একহাত দেখে নেওয়ার
অপেক্ষায় আছেন এসব নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশও মনে
করেন, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। ফলে ভোটারদের বেশিভাগের মধ্যে বিকল্প ভাবনা
কাজ করছে।
যোগাযোগ করা হলে
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। তবে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন মণ্ডল ঢাকা টাইমস২৪.কমকে বলেন, এনামুল হক
ভবিষ্যতে নির্বাচনে হারবেন এটা আমরা জানি। তাই গোয়েন্দা সংস্থা যদি এ রকম
কোন রিপোর্ট দিয়ে থাকে তা শতভাগ সঠিক।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
অ্যাডভোকেট শাজাহান মিয়ার পক্ষে আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করা কঠিন হবে বলে
জরিপ প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ঢাকা
টাইমস২৪.কমকে জানায়, পটুয়াখালী-১ নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন বিষয়ে
প্রতিমন্ত্রী পুত্রদের অযাচিত হস্তক্ষেপ, স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিভক্তি
ইতিমধ্যেই ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। পরবর্তী
নির্বাচনে ফলাফল অনুকূলে আনা ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে কঠিন হবে বলে উল্লেখ
করা হয়েছে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা
হলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ছেলে শহর আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক তারিকুজ্জামান মনি ঢাকা টাইমস২৪.কমকে বলেন, আগামী নির্বাচনে
তাঁরা অনায়াসে জিতবেন। জরিপ প্রতিবেদন কী বলা হল আর হলনা এনিয়ে তাঁরা
চিন্তিত নন।
জরিপ প্রতিবেদনে তথ্য
ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের অবস্থানও নির্বাচনী
এলাকায় নড়বড়ে বলে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। যশোর-২ নির্বাচনী
এলাকায় দলের মধ্যে মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন।
তিনি সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। পাশাপাশি মোস্তফা
ফারুক সেই অর্থে আমজনতার মন জয় করতে পারেননি। এলাকার উন্নয়নকে এগিয়ে
নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা আরও যথার্থ হতে পারত বলে ভোটারদের বেশিরভাগ
মনে করেন। সব মিলিয়ে ভোটারদের মধ্যে তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি ইতিবাচক ধারণা
গড়ে ওঠেনি। ফলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া ‘ভদ্রলোক’ মোস্তফা ফারুক
মোহাম্মদের জন্য কষ্টকর হবে বলে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মৎস ও প্রাণী সম্পদ
মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসও খানিকটা পিছিয়ে আছেন বলে জরিপ প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, গতবারের নির্বাচনে অল্পভোটে বিজয়ী মন্ত্রীর
বেশকিছু বদনাম হয়েছে। তাঁর এপিএস ও কিছু ঘনিষ্ট সহচরের আর্থিকভাবে
ফুলেফেঁপে ওঠাকে এলাকার ভোটারেরা নেতিবাচকভাবে নিচ্ছেন। আগামী ভোটে এর
নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
যোগাযোগ করা হলে মৎস ও
প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস ঢাকা টাইমস২৪.কমকে বলেন, আমি
মন্ত্রী হয়ে এলাকার যে উন্নয়ন করেছি বিগত ৩৫ বছরে সেই উন্নয়ন হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি হোপফুল হোপলেস নই’। আবদুল লতিফ বিশ্বাস আরও বলেন,
এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি। মানুষই বিচার করবেন। ভালো করলে ভোট দেবেন।
আর না করলে দেবেন না।
শ্রম ও জনশক্তি
মন্ত্রী রাজিউদ্দীন রাজুও ঝুঁকির মধ্যে আছেন। নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে
নরসিংদী পৌরসভার প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের অনুগামীরা আগামী নির্বাচনে
রাজিউদ্দীন রাজুর প্রকাশ্য বিরোধিতায় নামবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা
হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজিউদ্দীন রাজুর এক ধরনের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি
হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়।
ঢাকা টাইমস২৪.কম এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রী রাজিউদ্দন রাজু কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান
প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের পরবর্তী নির্বাচনী ভাগ্য সুপ্রসন্ন
হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। খুলনা-৩ আসনে পরবর্তী
নির্বাচনে প্রার্থী হলে প্রতিমন্ত্রীকে ভোটারদের নানা নেতিবাচক প্রশ্নের
মুখোমুখি হতে হবে। কিছু আত্মীয়-স্বজনের কর্মকাণ্ডও প্রতিমন্ত্রীকে ভোগাতে
পারে বলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন।
যোগাযোগ করা হলে শ্রম
প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ঢাকা টাইমস২৪.কমকে বলেন, তিনি আগামী
নির্বাচনে জিতবেন এই বিশ্বাস তাঁর আছে। কোন জরিপ প্রতিবেদন কী বলছে তা তিনি
জানেন না এবং এ বিষয়ে তাঁর কোন আগ্রহ নেই।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও আগামী নির্বাচনে ভাল করার সম্ভাবনা কম বলে
সংশ্লিষ্ট জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি,
গৃহায়ণ ও গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মান্নান খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী
আহাদ আলী সরকার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, শিল্প
প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর অবস্থাও নড়বড়ে বলে জরিপ প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রী
রমেশ চন্দ্র সেন, সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদও নির্বাচনী এলাকায়
অস্বস্তিতে আছেন। আর তিনজন প্রভাবশালী মন্ত্রী আর দুই জন প্রতিমন্ত্রীর
অবস্থাও নড়বড়ে বলে জরিপ প্রতিবেদন সূত্রে ঢাকা টাইমস২৪.কম এর কাছে খবর
আছে।
আওয়ামী লীগ ও
সরকারের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক আলাপকালে বলেন, একাধিক জরিপ
প্রতিবেদনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী-সাংসদের ব্যাপারে নেতিবাচক প্রতিবেদন
পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে দলের সভানেত্রীসহ অন্য
নীতিনির্ধারকরা কথা বলছেন। সম্ভাব্য খারাপ ফলাফল সামাল যাতে দেওয়া যায়
সেই চেষ্টা চলছে।
আওয়ামী লীগ
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ এসব বিষয়ে ঢাকা টাইমস২৪ কে বলেন,
গোটা প্রতিবেদন আমাদের হাতে নেই। তবে এসব বিষয় অনেকটা আমাদের জানা।
তৃণমূলের অনেক খবরই আমাদের কাছে আছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতার আসনের অবস্থা
ভালনা এমন খবর আসছে। ঈদের পরে তৃনমূল স্তরের নেতাদের নিয়ে আমরা বসব। এরপর
তাদের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হবে।
No comments:
Post a Comment