মোবায়েদুর রহমান : বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গানে দ্বীন হেফাজতে
ইসলামের আমীর আধ্যাত্মিক নেতা আল্লামা আহমেদ শফীর বলে কথিত একটি বক্তব্যের
বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী আলোচনা, সমালোচনা এবং আক্রমণের ঝড়
তুলেছেন। এই আক্রমণের ভাষা যদি হতো শালীন এবং যদি সেটি করা হতো নিয়ম নীতি
মেনে তাহলে কারো বলার কিছু ছিল না। কিন্তুু যখন দেখা যায় যে নিয়ম নীতি
নৈতিকতার ধার না ধেরে স্বয়ং প্রধান মন্ত্রীও এই আক্রমণের ব্যান্ড ওয়াগনে
শরিক হয়েছেন তখন দুঃখ রাখার আর জায়গা থাকে না।
সাংবাদিকতায় এবং বিচার প্রক্রিয়ায় একটি মৌলিক নিয়ম নীতি মানা হয়। সেটি হলো এই যে কারো বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করতে হলে সর্বাগ্রে সেই অভিযোগ সম্পর্কে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে হয়। অভিযোগ সম্পর্কে তার কি বক্তব্য, সেটি গ্রহণ করতে হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণ করার পরেও যদি মনে হয় যে অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে, একমাত্র তখনই অভিযোগটি প্রকাশ্যে উত্থাপন করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে সংবাদ মাধ্যমে অর্থাৎ রেডিও বা টেলিভিশনে কারো সম্পর্কে কোনো অভিযোগ প্রকাশ বা সম্প্রচার করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে হয় এবং প্রকাশিতব্য অভিযোগ সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। আল্লামা শফীর সাথে ওরা যোগাযোগ করেনি
কিন্তুু হেফাজতের আমীর আল্লামা শফীর সাথে অভিযোগকারিরা এসব আনুষ্ঠানিকতা বা ভদ্রতার ধার ধারেনি। চরম পরিতাপের বিষয় হলো এই যে এমন এক সময় আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে যখন তিনি পবিত্র ওমরা পালনের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে সউদী আরব রয়েছেন। তথ্য প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর উন্নতির যুগে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে অবস্থানরত যে কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র। দৈনিক ‘ইনকিলাব’ সাংবাদিকতার এই ন্যূনতম নিয়ম নীতি পালন করেছে। আল্লামার সাথে ইনকিলাব সউদী আরবে যোগাযোগ করেছে এবং আল্লামা শফী এইসব অভিযোগ বা সংবাদ অস্বীকার করেছেন এবং আল্লামা শফী এইসব অভিযোগ বা সংবাদ অস্বীকার করেছেন। গত ১৫ই জুলাই দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় পাঁচ কলামজুড়ে প্রধান সংবাদ হিসেবে যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তার শিরোনাম হলো, “এ বক্তব্য আহমদ শফীর নয়/এমন কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না : নাটক সাজিয়ে ইসলামকেই টার্গেট করা হচ্ছে।” প্রথম পৃষ্ঠার ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ওমরা উপলক্ষে সউদী আরব সফররত আল্লামা আহমদ শফীর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার ব্যক্তিগত সচিবের মাধ্যমে দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তিনি কখনো তার কোনো বক্তৃতার ভিডিও করেননি বা বাজারেও ছাড়েননি। অন্য কেউ বিনা অনুমতিতে ভিডিও করলে এতে সুপার ইম্পোজ করে কথা, ছবি, শব্দ বা দৃশ্য সংযোজন, বিকৃতি বা পরিবর্তন করলে এর দায়িত্ব তার নয়।”
ইনকিলাবের এই রিপোর্টটি ছাপা হওয়ার পরেও অপ প্রচারকারীরা আল্লামার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েই যাচ্ছে। দুচারটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল এই আধ্যাত্মিক নেতাকে জনসমক্ষে, বিশেষ করে নারী সমাজের কাছে, হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ইউ টিউবে প্রচারিত হওয়ার দোহাই দিচ্ছে। কম্পিউটার বা তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্র্কে যাদের ন্যূনতম জ্ঞানও রয়েছে তারা জানেন যে আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে কারো বক্তব্য পরিবর্তন করা বা কণ্ঠস্বর সুপার ইম্পোজ করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। এই রকম প্রতারণার মাধ্যমে ধারণ করা কোনো ভিডিওচিত্র ইউটিউবে আপলোড করা বর্তমান সময়ে কোনো ব্যাপারই নয়। যাই হোক, ইনকিলাব যদি আল্লামার সাথে সউদী আরবে যোগাযোগ করতে পারে তাহলে অন্যান্য গণমাধ্যম তার সাথে যোগাযোগ করে অভিযোগটির সত্য মিথ্যা জেনে নিলো না কেন?
প্রধানমন্ত্রী কিভাবে এই অপপ্রচারে যোগ দিলেন?
এসব সত্যাসত্য যাচাই না করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিভাবে আল্লামা বিরোধী অপপ্রচারের কোরাসে শরিক হলেন? তাও আবার জাতীয় সংসদের ফ্লোরে? শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী। সউদী আরবে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী ও কার্যকর দূতাবাস রয়েছে। সেই দূতাবাসের মাধ্যমে বর্তমানে সউদী আরবে অবস্থানরত আল্লামা শফীর সাথে যোগাযোগ করা মুহূর্তের ব্যাপার ছিল। দূতাবাসের মাধ্যমে আল্লামার সাথে যোগাযোগের পরেও যদি প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে কনভিন্সড হতেন যে ঐ ভিডিও ফুটেজটি আল্লামার, তাহলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংসদে তার এরকম আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ার যৌক্তিকতা থাকতো। কিছুই না করে তিনি আল্লামার শুধু সমালোচনাই করলেন না, আল্লামা সম্পর্কে এমন সব উক্তি করলেন যেগুলো শুনে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে মানুষের বাক রুদ্ধ হয়ে যায়। জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “উনার (আহমদ শফীর) বক্তব্য নোংরা এবং জঘন্য। উনার কি মা বোন নেই? উনার কি স্ত্রী নেই? উনি কি মায়ের পেটে জন্মগ্রহণ করেন নি? উনিকি স্ত্রীর মর্যাদা রক্ষা করেন না?
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু দিন পর পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, আমি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী নই। আমি সরকারি দলের কোনো এমপিও নই। বিরোধী দলেরও কোনো এমপি নই। আমি হলাম অপোজিশন লিডার। আমার যা মনে হয় তাই বলতে পারি। কিন্তুু প্রধানমন্ত্রী, আপনি সেটা পারেন না। কথা বলার সময় আপনাকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
মওলানা ভাসানীর এই কথাটি যে কোনো দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানের বেলায় প্রযোজ্য। শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলে থাকেন তখন তিনি অনেক কিছুই বলতে পারেন। বিরোধী দলের নেতা হয়েও আবার পল্টন ময়দানে যে ভাবে কথা বলতে পারেন, জাতীয় সংসদে সেভাবে কথা বলতে পারেন না। তিনি এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং অত্যন্ত ক্ষমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং তিনি যা বলবেন সেটি সরকার প্রধানের ঐ সুউচ্চ আসনের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। দু:খের বিষয় হলো এই যে, সেদিন আওয়ামী লীগের আরো কয়েকজন নারী সংসদ সদস্য আল্লামা শফী সম্পর্কে যে কদর্য মন্তব্য করেন যেগুলি রীতিমত গীবতের পর্যায়ে পড়ে। বেবী মওদুদ প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী বলে বাইরের লোক জানে। এটি বেবী মওদুদের জন্য সম্মানের ব্যাপার। সেই বেবী মওদুদ একজন সংসদ সদস্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে আল্লামা শফী সম্পর্কে বলেন, “উনি কি কোনো নারীর গর্ভে জন্ম নিয়েছেন? নাকি পশুর গর্ভে”? বেবী মওদুদ যা বলেছেন সেটি কি কোনো বক্তব্য? নাকি গীবত? এই ধরনের প্রশ্ন তুলে সংসদ সদস্য বেবী মওদুদ নিজের মানও বাড়াননি, অথবা প্রধানমন্ত্রীর মানও বাড়াননি। অন্যান্য সংসদ সদস্যও আল্লামা সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। দু:খের বিষয় হলো এই যে প্রধানমন্ত্রী যেমন এসব বক্তব্যে বাধা দেননি, তেমনি স্পিকার একজন মহিলা হয়েও এসব কুরুচিকর কদর্য বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেননি।
এই বক্তব্য কোথায় কখন দিয়েছেন?
আল্লামা শফী সউদী আরবের পুণ্য ভূমিতে বসে এই বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। এখন যারা এই অভিযোগ তুলেছেন সেটি তাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে। কবে কখন কোথায় আল্লামা এই বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি প্রমাণের দায়িত্ব অভিযোগ কারীদের। যদি তারা সমস্ত প্রশ্ন এবং সন্দেহের ঊর্ধ্বে এই অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে এই অপরাধের দায়-দায়িত্বই শুধু তাদের ঘাড়েই বর্তাবেনা, অনাবশ্যকভাবে প্রধান মন্ত্রীকে জড়ানোর দায়িত্বও তাদের ঘাড়ে পড়বে।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় :
মন্ত্রীত্ব প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি চিরস্থায়ী নয়। জীবন ক্ষণস্থায়ী। প্রতিটি মানুষকেই একদিন পরপারে যেতে হবে। এই জীবনের গুনাহ্ খাতার পুরস্কার বা শাস্তি আসবে ঐ জীবনে। ক্ষমতার সুরক্ষিত দূর্গে থেকে আজ কিছু বললেও ঐ দুনিয়ায় ক্ষমতার দূর্গ কোনো কাজে আসবে না। তাই আহমদ শফীর মত একজন আধ্যাত্মিক নেতা এবং বুজুর্গানে দ্বীনের চরিত্র হননের সময় ছোট বড় নির্বিশেষে সকলে যদি জাগতিক স্বার্থের বাইরে মানবতা এবং পরকালের বিষয়টি বিবেচনায় আনেন তাহলে সেটি সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
সাংবাদিকতায় এবং বিচার প্রক্রিয়ায় একটি মৌলিক নিয়ম নীতি মানা হয়। সেটি হলো এই যে কারো বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করতে হলে সর্বাগ্রে সেই অভিযোগ সম্পর্কে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে হয়। অভিযোগ সম্পর্কে তার কি বক্তব্য, সেটি গ্রহণ করতে হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণ করার পরেও যদি মনে হয় যে অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে, একমাত্র তখনই অভিযোগটি প্রকাশ্যে উত্থাপন করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে সংবাদ মাধ্যমে অর্থাৎ রেডিও বা টেলিভিশনে কারো সম্পর্কে কোনো অভিযোগ প্রকাশ বা সম্প্রচার করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে হয় এবং প্রকাশিতব্য অভিযোগ সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। আল্লামা শফীর সাথে ওরা যোগাযোগ করেনি
কিন্তুু হেফাজতের আমীর আল্লামা শফীর সাথে অভিযোগকারিরা এসব আনুষ্ঠানিকতা বা ভদ্রতার ধার ধারেনি। চরম পরিতাপের বিষয় হলো এই যে এমন এক সময় আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে যখন তিনি পবিত্র ওমরা পালনের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে সউদী আরব রয়েছেন। তথ্য প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর উন্নতির যুগে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে অবস্থানরত যে কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র। দৈনিক ‘ইনকিলাব’ সাংবাদিকতার এই ন্যূনতম নিয়ম নীতি পালন করেছে। আল্লামার সাথে ইনকিলাব সউদী আরবে যোগাযোগ করেছে এবং আল্লামা শফী এইসব অভিযোগ বা সংবাদ অস্বীকার করেছেন এবং আল্লামা শফী এইসব অভিযোগ বা সংবাদ অস্বীকার করেছেন। গত ১৫ই জুলাই দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় পাঁচ কলামজুড়ে প্রধান সংবাদ হিসেবে যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তার শিরোনাম হলো, “এ বক্তব্য আহমদ শফীর নয়/এমন কথা প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানায় না : নাটক সাজিয়ে ইসলামকেই টার্গেট করা হচ্ছে।” প্রথম পৃষ্ঠার ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ওমরা উপলক্ষে সউদী আরব সফররত আল্লামা আহমদ শফীর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার ব্যক্তিগত সচিবের মাধ্যমে দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তিনি কখনো তার কোনো বক্তৃতার ভিডিও করেননি বা বাজারেও ছাড়েননি। অন্য কেউ বিনা অনুমতিতে ভিডিও করলে এতে সুপার ইম্পোজ করে কথা, ছবি, শব্দ বা দৃশ্য সংযোজন, বিকৃতি বা পরিবর্তন করলে এর দায়িত্ব তার নয়।”
ইনকিলাবের এই রিপোর্টটি ছাপা হওয়ার পরেও অপ প্রচারকারীরা আল্লামার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েই যাচ্ছে। দুচারটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল এই আধ্যাত্মিক নেতাকে জনসমক্ষে, বিশেষ করে নারী সমাজের কাছে, হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ইউ টিউবে প্রচারিত হওয়ার দোহাই দিচ্ছে। কম্পিউটার বা তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্র্কে যাদের ন্যূনতম জ্ঞানও রয়েছে তারা জানেন যে আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে কারো বক্তব্য পরিবর্তন করা বা কণ্ঠস্বর সুপার ইম্পোজ করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। এই রকম প্রতারণার মাধ্যমে ধারণ করা কোনো ভিডিওচিত্র ইউটিউবে আপলোড করা বর্তমান সময়ে কোনো ব্যাপারই নয়। যাই হোক, ইনকিলাব যদি আল্লামার সাথে সউদী আরবে যোগাযোগ করতে পারে তাহলে অন্যান্য গণমাধ্যম তার সাথে যোগাযোগ করে অভিযোগটির সত্য মিথ্যা জেনে নিলো না কেন?
প্রধানমন্ত্রী কিভাবে এই অপপ্রচারে যোগ দিলেন?
এসব সত্যাসত্য যাচাই না করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিভাবে আল্লামা বিরোধী অপপ্রচারের কোরাসে শরিক হলেন? তাও আবার জাতীয় সংসদের ফ্লোরে? শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী। সউদী আরবে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী ও কার্যকর দূতাবাস রয়েছে। সেই দূতাবাসের মাধ্যমে বর্তমানে সউদী আরবে অবস্থানরত আল্লামা শফীর সাথে যোগাযোগ করা মুহূর্তের ব্যাপার ছিল। দূতাবাসের মাধ্যমে আল্লামার সাথে যোগাযোগের পরেও যদি প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে কনভিন্সড হতেন যে ঐ ভিডিও ফুটেজটি আল্লামার, তাহলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংসদে তার এরকম আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ার যৌক্তিকতা থাকতো। কিছুই না করে তিনি আল্লামার শুধু সমালোচনাই করলেন না, আল্লামা সম্পর্কে এমন সব উক্তি করলেন যেগুলো শুনে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে মানুষের বাক রুদ্ধ হয়ে যায়। জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “উনার (আহমদ শফীর) বক্তব্য নোংরা এবং জঘন্য। উনার কি মা বোন নেই? উনার কি স্ত্রী নেই? উনি কি মায়ের পেটে জন্মগ্রহণ করেন নি? উনিকি স্ত্রীর মর্যাদা রক্ষা করেন না?
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু দিন পর পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, আমি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী নই। আমি সরকারি দলের কোনো এমপিও নই। বিরোধী দলেরও কোনো এমপি নই। আমি হলাম অপোজিশন লিডার। আমার যা মনে হয় তাই বলতে পারি। কিন্তুু প্রধানমন্ত্রী, আপনি সেটা পারেন না। কথা বলার সময় আপনাকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
মওলানা ভাসানীর এই কথাটি যে কোনো দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানের বেলায় প্রযোজ্য। শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলে থাকেন তখন তিনি অনেক কিছুই বলতে পারেন। বিরোধী দলের নেতা হয়েও আবার পল্টন ময়দানে যে ভাবে কথা বলতে পারেন, জাতীয় সংসদে সেভাবে কথা বলতে পারেন না। তিনি এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং অত্যন্ত ক্ষমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং তিনি যা বলবেন সেটি সরকার প্রধানের ঐ সুউচ্চ আসনের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। দু:খের বিষয় হলো এই যে, সেদিন আওয়ামী লীগের আরো কয়েকজন নারী সংসদ সদস্য আল্লামা শফী সম্পর্কে যে কদর্য মন্তব্য করেন যেগুলি রীতিমত গীবতের পর্যায়ে পড়ে। বেবী মওদুদ প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী বলে বাইরের লোক জানে। এটি বেবী মওদুদের জন্য সম্মানের ব্যাপার। সেই বেবী মওদুদ একজন সংসদ সদস্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে আল্লামা শফী সম্পর্কে বলেন, “উনি কি কোনো নারীর গর্ভে জন্ম নিয়েছেন? নাকি পশুর গর্ভে”? বেবী মওদুদ যা বলেছেন সেটি কি কোনো বক্তব্য? নাকি গীবত? এই ধরনের প্রশ্ন তুলে সংসদ সদস্য বেবী মওদুদ নিজের মানও বাড়াননি, অথবা প্রধানমন্ত্রীর মানও বাড়াননি। অন্যান্য সংসদ সদস্যও আল্লামা সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। দু:খের বিষয় হলো এই যে প্রধানমন্ত্রী যেমন এসব বক্তব্যে বাধা দেননি, তেমনি স্পিকার একজন মহিলা হয়েও এসব কুরুচিকর কদর্য বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেননি।
এই বক্তব্য কোথায় কখন দিয়েছেন?
আল্লামা শফী সউদী আরবের পুণ্য ভূমিতে বসে এই বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। এখন যারা এই অভিযোগ তুলেছেন সেটি তাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে। কবে কখন কোথায় আল্লামা এই বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি প্রমাণের দায়িত্ব অভিযোগ কারীদের। যদি তারা সমস্ত প্রশ্ন এবং সন্দেহের ঊর্ধ্বে এই অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে এই অপরাধের দায়-দায়িত্বই শুধু তাদের ঘাড়েই বর্তাবেনা, অনাবশ্যকভাবে প্রধান মন্ত্রীকে জড়ানোর দায়িত্বও তাদের ঘাড়ে পড়বে।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় :
মন্ত্রীত্ব প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি চিরস্থায়ী নয়। জীবন ক্ষণস্থায়ী। প্রতিটি মানুষকেই একদিন পরপারে যেতে হবে। এই জীবনের গুনাহ্ খাতার পুরস্কার বা শাস্তি আসবে ঐ জীবনে। ক্ষমতার সুরক্ষিত দূর্গে থেকে আজ কিছু বললেও ঐ দুনিয়ায় ক্ষমতার দূর্গ কোনো কাজে আসবে না। তাই আহমদ শফীর মত একজন আধ্যাত্মিক নেতা এবং বুজুর্গানে দ্বীনের চরিত্র হননের সময় ছোট বড় নির্বিশেষে সকলে যদি জাগতিক স্বার্থের বাইরে মানবতা এবং পরকালের বিষয়টি বিবেচনায় আনেন তাহলে সেটি সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
http://www.dailyinqilab.com/details_news.php?id=121298&&%20page_id=%205
No comments:
Post a Comment