Friday, August 16, 2013

হাসিনার শত্রুর প্রয়োজন নেই।

মাহফুজ আনাম সম্পাদক, ডেইলি স্টার: এ ধরনের মন্ত্রী, উপদেষ্টা থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আসলেই কোন শত্রুর প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী, সরকার এবং তার দলকে বিব্রত এবং ধ্বংস করার জন্য এরাই যথেষ্ট। সমপ্রতি দু’টি ঘটনায় এটা প্রমাণ হয় যে, শেখ হাসিনা যাদের নিয়োগ দিয়েছেন অথবা যেসব কর্মকর্তা তার চারপাশে রয়েছেন তারা সরকার পরিচালনায় অক্ষম। চাতুর্যের সঙ্গে যা করা সম্ভব, তা তারা করেন দাম্ভিকতার সঙ্গে। যা যুক্তির দ্বারা করা সম্ভব   তা তারা করেন শক্তির দ্বারা। যা আইনি পথে করা সম্ভব তা তারা করেন বেআইনিভাবে। প্রথমে বলা যায়, বিলবোর্ডের ব্যাপারটি। কারণ যেভাবে এ কাজটি করা হয়েছে তাতে এর আসল উদ্দেশ্যই পণ্ড হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র বাংলাদেশে এসে যখন ঘোষণা দিলেন যে, তিনি তার মায়ের সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের মোকাবিলা করতে সহায়তা করবেন তখন থেকেই এ প্রচারণার বিষয়টি শোনা যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী পুত্র যে হার্ভার্ড কনসালটেন্টের কথা বলেছিলেন তিনি হয়তো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বা অন্যান্য নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক প্রচারণার কথা উল্লেখ করেছিলেন। ওইসব প্রচারণায় বিলবোর্ডসহ গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অর্থ খরচের বিষয়টিও নিশ্চিয়ই হয়তো আলোচনায় এসেছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন অনুমোদনের পরই অদক্ষ, ভাড়া আদায়ের মানসিকতা এবং ক্ষমতা প্রদর্শনের বিষয়টির উদয় ঘটে আর বিলবোর্ড কেলেঙ্কারির জন্ম হয়। দৃশ্যত যা ছিল একটি শুভ চিন্তা সেটা পরিণত হয় জনসংযোগ বিপর্যয়ে। এর ভয়াবহ পরিণতি অবশ্য নির্বাচনের আগে বুঝা যাবে না।  প্রধানমন্ত্রীর অফিস এবং তার দলে কি একজন লোকও ছিলেন না যিনি বিষয়টির পদ্ধতিগত অবৈধতার বিষয় তুলে ধরতে পারতেন? এমন কেউ যদি সেখানে না থেকে থাকেন তাহলে প্রধানমন্ত্রীর একেবারেই কাছে যে বুদ্ধিমত্তা আর নৈতিক দেউলিয়াত্ব চলছে সেটা নিয়ে আসলেই তার গভীর উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। আর সেখানে যদি এমন ধরনের লোক থেকে থাকেন যারা এ বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিবোধ করেছেন কিন্তু কিছু বলার সাহস পাননি। তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে আরেক ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। সেটি হলো কিভাবে তিনি দ্বিমত পোষণকারীদের বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা করবেন। নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করার ব্যর্থতা এবং দ্বিমত প্রকাশে ভয় পাওয়া- এ দু’পক্ষই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার পথে হুমকি হিসেবে কাজ করে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সম্পর্কে যে সমালোচনাটি সবচেয়ে বেশি হয় সেটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হয় তোষামোদকারীতে পরিপূর্ণ অথবা সেখানে পেশাদার লোকজন থাকলেও তারা কেবল হুকুম তামিল করেন। এদের অনেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রভাবকে কাজে লাগান।
অধিকারের রিপোর্ট সামলানো এবং এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানের গ্রেপ্তারের বিষয়টি অদক্ষতার একটি উদাহরণ। এর সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, তা সরকার এবং বাংলাদেশকে সারা দুনিয়ার কাছে বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি করেছে। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ একটি বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এবং বাংলাদেশ যার প্রাপ্য নয় তা পাচ্ছে। এটা আমাদের উপর আনা শেখ হাসিনা সরকারের উচিত হয়নি। ডেইলি স্টার ৫ই মে হেফাজতের সমাবেশ এবং রাতের ঘটনা কাভার করেছে। ওই ঘটনায় মৃত্যুর ব্যাপারে রিপোর্টের ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক ছিলাম। ওই সময় এবং এখন পর্যন্ত অধিকার বর্ণিত নিহতের ৬১ সংখ্যার ব্যাপারে আমরা একমত নই। আমরা মনে করি, সরকারের অধিকার রয়েছে ‘অধিকার’ বর্ণিত সংখ্যার নিহতদের নাম এবং ঠিকানা জানার। তথ্য মন্ত্রণালয় ১০ই জুলাই তা জানতে চেয়ে অধিকারকে চিঠি দিয়েছিল। এক সপ্তাহ পর অধিকার যখন সরকারকে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল এ নিয়ে আদালতে যাওয়া। আমাদের মতে, এটি একটি ভাল মামলা হতো এবং খুব সম্ভবত আদালত অধিকারকে তথ্য দেয়ার নির্দেশ দিতো।
অদক্ষতা এবং দাম্ভিকতা আবার ফিরে আসে যখন এক মাস অপেক্ষা করার পর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা রাত সাড়ে ৯টায় স্ত্রী এবং সন্তানসহ বাড়ি ফেরার পথে আদিলুর রহমান খানকে গ্রেপ্তার করে। সরকারের সামনে এ নিয়ে যেসব বিকল্প ছিল তার মধ্যে রয়েছে- ১. প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য দিনের বেলায় তাকে আনা যেতো ২. তাকে নোটিস দেয়া যেত যে, আইন রয়েছে এনজিও সরকারকে তথ্য দিতে বাধ্য ৩. প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য আদালতের নির্দেশনা চাওয়া যেতো ৪. মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়ের করা যেতো ৫. সরকার বিশ্বস্ত কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে পারতো যে সংস্থা অধিকারের বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করতে পারতো এবং সরকারের দাবিমতো তাদের প্রতিবেদনে ভুল তথ্য থাকলে তা প্রকাশ করতে পারতো। আদিলুরকে শুধু গ্রেপ্তারই করা হয়নি, এমনকি তাকে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। সৌভাগ্যবশত হাইকোর্ট তা বাতিল করেছে। আমরা সবাই জানি রিমান্ডে কি হয়?
শুক্রবারের ডেইলি স্টার থেকে অনূদিত

No comments:

Post a Comment